ফ্যাতাড়ুদের কুহক বিভ্রম, ফ্লাইং হিউম্যান বিইংস ও নবারুণের স্যাটায়ার সমূহ

পাপড়ি রহমান

তান্ত্রিক সাধকদের চাইতেও কলম সাধকেরা যে অধিক ক্ষমতাধর ও কুহক বিস্তারি, নবারুণ ভট্টাচার্য তা যথাযথ প্রমাণ করে গেছেন। তন্ত্রমন্ত ্রের জোরে মনি হারা ফণির মতো আমরা যতোটা আচ্ছণ্ণ থাকি, বশীঃকরণের কার্যকারণৠ‡ যতোটা নমঃ নমঃ থাকি, নবারুণের সিকাডশন তার চাইতেও ঢের গুন বেশি! এ কারণেই আমরা নবারুণের বিমুগ্ধ পাঠক হয়ে উঠি। আমাদের বিমুগ্ধতা শুধু নবারুণেই থেমে থাকে না, তা অচিরেই ফ্যাতাড়ু পযর্ন্ত গড়ায়।
ফ্যাতাড়ু?
ফ্যাতাড়ু কে? ফ্যাতাড়ূ কাহারা?
হু আর দে? ইহারা কি?
এই প্রশ্নের উত্তরে শুনতে পাই-
বুঝতে পারছি না স্যার। ফ্লাইং হিউম্যান বিংস।
(ফ্যাতাডুর বোম্বাচাক, পৃষ্ঠা নং ৩৫)
ফলে নবারুণের জন্য আমরা যতোটা আকুলি-à¦¬à¦¿à¦•à§à ¦²à¦¿ করি, ফ্যাতাড়ুর জন্যও ততোটাই।
ফ্যাৎ ফ্যাৎ সাঁই সাঁই করে উড়তে থাকে ফ্যাতাড়ুর দল! তাদের সংগে আমি বা আপনিও কি উড়তে শুরু করি না?
ফ্যাতাড়ু-- নবারুণের কলম সাধনার গুনে যাদের জন্ম হয়েছে।
ফের হয়তো আপনার বা আমার মস্তিস্কে এই প্রশ্ন চিড়বিড়িয়ে ওঠে-
ধুস—বলবেন তো ফ্যাতাড়ু আসলে কে?
কিংবা সামান্য ঘুরিয়ে-ফিরঠ¿à§Ÿà§‡ একই কথা বারংবার ঘ্যানঘ্যান াতে থাকি--
ফ্যাতাড়ুরা আসলে কি?
জবাব কিন্তু একেবারে ওষ্ঠের আগাতেই রয়েছে--
ঠিক কী তা বলতে পারব না। তবে ফ্যাতাড়ুরা হল খুব স্পেশাল। বুঝলে?
ইতিহাসে দেখবে কত মহাপুরুষ মানুষকে নতুন করে বানাবার জন্য কত ফন্দি বাতলেছে। আমার তো মনে হয় অনেক ঘেঁটেঘুঁটৠ‡ শেষমেশ এই ফ্যাতাড়ুই তৈরি হয়েছে। (পৃষ্ঠা নং-১৩)
নবারুণ ভট্টাচার্য ের বয়ানে ফ্যাতাড়ু-বৠযাখ্যা এই রকম। কিন্তু ফের যদি আমার বা আপনার কৌতুহল বাড়ে বা বাড়তেই থাকে তাহলে কি?

ফ্যাতাড়ু হলো ফ্যাতাড়ু। ফ্যাতাড়ু আদতে আপনি বা আমি। তুমি বা সে। পর বা অপরও বলা যায়। তবে ফ্যাতাড়ুসি রিজ ভাল করে পড়ে-টড়ে অধীত বিদ্যা বলে বলতে পারি--
ফ্যাতাড়ুরা হলো পোড়-খাওয়া মারমুখী জনগণ!
ফ্যাতাড়ু হলো ঘুমিয়ে থাকা মানুষের জাগ্রত বিবেক। মানুষের অন্তরের অভ্যন্তরে থাকা ‘সুপ্ত-à¦¸à§â€™à ¥¤ এবং এই ‘সুপ্ত-সু’ এর সৌন্দর্য অবর্ণনীয়।ঠ¯à§‡à¦®à¦¨ ঘোর-à¦¬à¦°à§à¦·à¦¾à¦•à ¾à¦²à§‡ নিকুলি বিলের সৌন্দর্য!বঠলের অফুরন্ত জলরাশি আর তাতে অগণন ঢেউদের নাচন, নিরুদ্দেশৠর পানে দুর্মর ছুটে-চলা। নিকুলির অগাধ জলের চাদরের তলায় ভয়ে কম্পমান শাপলার কোমল-ডাঁটা! সেই কোমলতার উপর স্বলজ্জ ফুটে থাকা কুমুদের নয়াভিরাম পাপড়ি!মৃত্ঠু নিশ্চিত আছে জেনেও তার বেঁচে থাকা! যে কোনো মুহূর্তে বিশাল ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনাটু কু জেনেও তার ফুটে থাকা!ফুটতে ফুটতে কোমল থেকে কোমলতর হয়ে ওঠা!
আজকের পৃথিবী যেখানে ‘কু’তে ‘কু’ তেপরিপূর্ঠ£, কুচিন্তা আর কুতর্কের à¦†à¦¬à¦¾à¦¸à¦¸à§à¦¥à¦²â€”à ¸à§‡à¦–à¦¾à¦¨à§‡ ‘সু’ মানেই তো শুভ। শুভবার্তার ইঙ্গিতবহ! ফলে ‘সু’ এর আবির্ভাব মাত্রই সুবাতাস। সুচিন্তা। সুকর্ম। আর সুফলাফল।মা নুষের অন্তর্গত সৌন্দর্যেঠনাম ‘সু’। আর যাবতীয় মন্দ কিছুই তো ‘কু’! কু মানেই অধর্ম।কালৠ‹à¥¤à¦•à§à§Žà¦¸à¦¿à¦¤à¥¤à¦… ¦¨à¦¾à¦šà¦¾à¦°à¥¤à¦¸à§à¦¬à§ˆ ¦°à¦¾à¦šà¦¾à¦° আর অন্ধকার। এই ‘কু’এর প্রতি বিদ্রোহ জানান দিতেই ফ্যাতাড়ুদৠর ফ্যাতাড়ু হয়ে ওঠা।
ফলে ফ্যাতাড়ুদৠর সু-গৌষ্ঠির স্টিকার দেয়া যেতে পারে। এই ফ্যাতাড়ুরা ই তো পৃথিবীর মানুষের ভুল-ভাল, লোভ-লালসা, আর অসততার বিরুদ্ধাচা র করে যাচ্ছে। আদতে এই ফ্যাতাড়ু নবারুণ নিজেই। নবারুণেরসৠব-à¦°à§‚à¦ªà¦¾à¦¨à§à¦¤à¦°à ¤ যার রয়েছে উড়িবার স্বপ্নডানা ! এই ডানাই তাকে রাখে জাল-জটলার à¦¬à¦¾à¦‡à¦°à§‡à¥¤à¦…à¦¨à§à ¯à§‡à¦° ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মনে মনে এই স্বপ্নডানা তে ভর করেই হয়তো তিনি উড়তে à¦šà§‡à§Ÿà§‡à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨à ¥¤à¦œà¦¾à¦¨à¦¤à§‡à¦¨, ওইভাবে উড়তে পারলে এই সমাজে একদিন পরিবর্তন আনা সম্ভবপর হয়ে উঠবে।এই জাতির যত নষ্টামি, ভ্রষ্টামি আর অন্ধতার পায়ে কুঠারাঘাত করা যাবে।
স্বপ্নডানা মেলে উড়িবার আনন্দ একবার নবারুণের অনুভবে দেখা যাক---
‘চোখ খুলতেই ডি এস দেখল হলদে হ্যালোজেনৠ‡à¦° আলোগুলো চিড়িক চিড়িক করে ঘুরপাক খাচ্ছে, পাশে মদন নেই, সারা শরীরে পোকার পাখা গজাবার অবিমৃষ্য আনন্দ, রোমকূপে রোমকূপে পালানো বউয়ের আর্তচুম্বঠ, অন্যদিকে মহাকাশ থেকে গ্যাগারিনৠ‡à¦° বালকসুলভ মুখের নিষ্পাপ হাসি, অমনি ওপরের দিকে তাকিয়ে ডি এস দেখল...
...চৌকাঠে হলদে হ্যালোজেন আলোর পাশে উড়ন্ত মদন আকাশে থেমে আছে। আস্তে আস্তে হাত নাড়ছে আকাশের এক জায়গায় স্থিতু থাকার জন্য। দুপাটি নকল দাঁতের ওপরে হলুদ হ্যালোজেন সোনালি আভা তৈরি করছে।’
(পৃষ্ঠা নং ১৩)
ফ্যাতাড়ু বনে যাওয়া মানে স্বাধীন হয়ে যাওয়া। বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস টেনে নেয়া।
পরাধীন থাকা মানেই দাসত্ব স্বীকার করে নেয়া। পরাধীনতা, গ্লানি, জোচ্চোরি, মানুষে মানুষে তীব্র à¦¬à¦¿à¦­à§‡à¦¦â€”à¦à¦¸à¦¬à ‡ তো সমাজ তথা রাষ্ট্রের উপর প্রভাব ফেলে। ক্রমে সমাজ তথা রাষ্ট্রের অবস্থা হয়ে ওঠে ‘বোঁদপড়া’ ডোবার জলের অনুরূপ।
‘বোঁদপড়া’ ডোবার জল এতটাই দূষিত যে, জলের দূর্গন্ধে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে! আর ফ্যাতাড়ুরা কিনা ওই জলেই বোম্বাচাক বানাতে পারে! এই জলবোমার বিস্ফোরনে যে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তার কাছে এটম বোমার বিস্ফোরক কোন ছার? তবেঅই ডোবার বাসিন্দাদৠর যে জীবনচর্যা, তাও কিন্তু ভেবে দেখবার মতো বিষয়। কই-মাগুর-শি ¦™à§à¦—ি-à¦¶à¦¾à¦®à§à¦•à ‡à¦° চামড়া-মাংসৠ‡à¦° আকার-à¦ªà§à¦°à¦•à¦¾à ¦° বদলে এক্কেবারে রাবারের মতো হয়ে গেছে! ফ্যাতাড়ুদৠর কাছে à¦†à¦—à§à¦¨à§‡à§Ÿà¦¾à¦¸à§à ¤à§à¦°à§‡à¦° চাইতে অই ডোবার জলই অধিক চাহিদা সম্পন্ন! কারণ তারা জানে অযথা রক্তপাতে বৃথাই সময় ক্ষেপন, কাজের কাজ কিচ্ছুটি হবার নয়। পরিবর্তন ঘটাতে চাইলে ঘটে বুদ্ধি থাকা চাই। তোপ-কোপের সাহায্যে যে বদল তার আয়ূ ক্ষণস্থায়ৠ। রক্তপাতে, জীবন নিধনে শুধু সহিংসতা বাড়তে পারে, মূলের পরিবর্তন একেবারেই অসম্ভব!
‘সেই বোঁদপড়া ডোবার জল। পোকামাকড়, জার্মস থিকথিক করছে। কাকশকুনও ধারে বাড়ে যাবে না। পিচকিরি দিয়ে বেলুনে à¦¢à§à¦•à¦¿à§Ÿà§‡à¦›à¦¿à¥¤à —à¦¿à¦à¦Ÿ দিয়ে বেঁধেছি জলবোমা।’
ফ্যাতাড়ুরা জানে, পঁচাজলের বোম্বাচাক মেরেই কত কি যে হাসিল করা যায় ! অনাচারের আখড়া বিলকুল হাপিস করা যায়। বন্ধুক, বোমা, ককটেল,à¦šà¦¾à¦ªà¦¾à ¦¤à¦¿, ভোজালির দরকার নেই। ফ্যাতাড়ুদৠর অস্ত্র শামুক পঁচা আর বোঁদপড়া ডোবার জল।আর ওতেই কেল্লা ফতে হয়ে যায়!
ফ্যাতাড়ু গৌষ্ঠীর যাবতীয় মিশনই সাকসেসফুল হয়ে ওঠে। তাদের ধরা খাওয়ার কোনো স্কোপ-ই নাই! ধরা খেতে খেতেই তারা উড়ে যেতে পারে। ব্যাটম্যান দের মতো সাঁই সাঁই ফ্যাৎ ফ্যাৎ করে যত্রতত্র পগাড় পার হতে পারে। যার রয়েছে উড়িবার ডানা, তাকে কিভাবেই বা আটকানো যায়? নবারুণও তাদের আটকাতে চেয়েছেন বলে মনে হয় না। ফলে ফ্যাতাড়ুরা সর্বত্রই গমন করে।
বইমেলায়, শুভবিবাহে, বিশ্বকাপে, কবি সম্মেলনে, বাংলা সাহিত্যে, এমনকি সাধু সমাগমে। ছোল, ঢপিস্ট ও সংস্কৃতি সচেতন খোঁয়াড়ে ফ্যাতাড়ুরা অর্থ, যশ, খ্যাতির কিছুই নবারুণের গোলায় তুলে দেয় নি—যা দিয়েছে তা নিজের মতো করে বেঁচে থাকা, আর জীবনের অফুরন্ত রসদ!
নিরন্তর যে প্রতিহিংসঠর আগুন আমাদের মধ্যে কখনও ধিকি ধিকি, কখনও ধুকধুক করেই চলেছে—যা কেলিয়ে পড়লেও নিভতে পারে না---তা অনেকাংশেই চরিতার্থ করার পথ ফ্যাতাড়ুরা আমাদের দেখিয়েছে। ¦¤à¦¾ মায়ার খেলা দিয়ে হোক বা বোঁদপড়া ডোবার জল দিয়ে হোক।
ফ্যাতাড়ুদৠর নানান কুহকের সংগে পরিচিত হতে হতে আমরা এও জেনে ফেলি যে, বৃথাই এই বিভ্রম! এই মায়াজাল বিস্তার ছলনা মাত্র!এই ছলনাটুকু না-করলে কিভাবেই বা সকল কিছু বিশ্বাসযোঠ্য করে তোলা সম্ভব ছিল? অই মায়াজাল না বিছালে ইস্পিতকে হস্তগত করা দূরহ হয়ে পড়ত। মায়া বিস্তারের ফলে à¦†à¦®à¦°à¦¾à¦†à¦®à¦¾à¦¦à§‡à ° ইস্পিতকে লভি। লভি বড় সহজে। আর মায়াটুকু থেকে যায় ভূতলে। অবলুণ্ঠিতঠাবে।
ফ্লাইং হিউম্যান বিংস—এই না হলে ফ্যাতাড়ুদৠর কার্যকারণ হজম করা সহজ হতো না।
ছিলাম চোদু, হলাম সাধু
হতেই দেখি আজব বাঁড়া।
হিপ পকেটে, বুক পকেটে
ফাকিং ফরেন নোটের তাড়া
ফ্যাতাড়ুদৠর এইরূপছবক তাহলে মাঠেই মারা যেত!

সমাজের যত অসংগতি, জাল-জোচ্চরঠ¿, ফেরেববাজি, হিংসা-à¦¦à§à¦¬à§‡à ·, ‘কু’ à¦¬à¦¿à¦·à§Ÿà¦¾à¦¦à¦¿â€”à¦†à ° সেসবের প্রতি ঘৃণা-রাগ-à¦¬à¦¿à ¦à§à¦°à§à¦ª ইত্যাদি এস্টাবলিশ করতে গেলে ফ্যাতাড়ু না-হয়ে উপায় কি? পাঁড়-মাতাল না-হলে কি করে সম্ভব চোখ-কান বুঁজে এতসব যাতনা বয়ে বেড়ানো?
নবারুণের এই কুহক বিস্তার,মাৠার খেলা আদতে এক ধরণের প্রতিবাদ। তিনি তো জানতেন এই সমাজের আগা-পাশ-তলা সবই বোঁদপড়া ডোবার জলের মতন দূষিত। দূর্গ্ধযুঠ•à§à¦¤ ও অপেয়।
বাঙালির তরে যদি
বাঙালি না কাঁদে
চুতিয়া বলিয়া তাকে
ডাকো ভীমনাদে

হয়তো এই সব কারণেই লেখক নবারুণ ভট্টাচার্য ম্যালেরিয়ঠনয়, কুইনাইন সারাতেই তৎপর ছিলেন। তিনি জানতেন বাঙালি জাতির পচন কাণ্ডে নয়, মূলে। আর মূলে পচন ধরলে বৃক্ষের উত্থান কিছুতেই সম্ভবপর নয়!
(রচনাকালঃ ২৯ জুন ২০১৫)